ভালোবাসার কবি, বিদ্রোহী কবির ৪৭ তম মহান প্রয়াণে ঘোড়সওয়ার এর শ্রদ্ধাঞ্জলি
🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏
তোমার নীরবতা নেই , নেই তোমার মৃত্যু তুমি চিরজাগ্রত ধুমকেতু ......
" .. আমার কাব্য আমার গান আমার জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে। যদি কোনদিন আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে আমার একাকীত্বের পরম শুন্য হতে অসময়ে নামতে হয় তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না আমি সেই নজরুল; সেই নজরুল অনেকদিন আগে মৃত্যুর খিড়কি দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে। মনে করবেন পূণ্যার্থের তৃষা নিয়ে যে একটি অশান্ত তরুণ এই ধরায় এসেছিল অপূর্ণতার বেদনায় তারই বিগত আত্না যেন স্বপ্নে আমাদের মাঝে কেঁদে গেল।
যদি আর বাঁশি না বাজে- আমি কবি বলে বলছিনা, আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি-আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি আমি নেতা হতে আসিনি,আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলামনা বলে আমি এই প্রেমহীন নীরব পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম। যেদিন আমি চলে যাব সেদিন হয়তোবা বড় বড় সভা হবে, কত প্রশংসা কত কবিতা হয়ত বেরুবে আমার নামে,দেশপ্রেমিক-ত্যাগীবীর-বিদ্রোহী বিশেষনের পর বিশেষন, টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পর মেরে,বক্তার পর বক্তা এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে-বন্ধু তুমি যেন যেওনা। যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ করো, তোমার আঙ্গিনায় বা আশেপাশে যদি একটা ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও সেইটিকে বুকে চেপে বলো, বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি—-
“তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবনা
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা ....."
কতো অবহেলা ছিল কবির জীবনে বারবার মানুষের অবহেলা অবজ্ঞা কবিকে আহত করেছে....
দারিদ্রতা, পরাধীনতা, অরাজকতা কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি কবিকে।
কবি জানতেন, বিশ্বাস করতেন কবিগুরুর আশীর্বাদ যে তাঁর মাথায় আছে.....
****
আমার নজরুল ---
নীহার রঞ্জন দাস
তোমাকে কেউ হিন্দু বলে ব্যঙ্গ করে
বলে কৃষ্ণ কালীর ছেলে তুমি ,
তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
তোমাকে কেউ মুসলমান বলে
তাতেও আমার কিছু যায় আসে না।
কেউ বলে তুমি নাকি দেশদ্রোহী
তুমি নাকি ছিনিয়ে নিয়েছো
তাদের রাজ সিংহাসন ,
তাতেও আমার কিছু যায় আসে না।
আমি তো জেনেছি রবিশিষ্য তুমি
ধুমকেতু অগ্নিবীণায় তোমার আওয়াজ ।
তোমার আওয়াজ ফকিরের কথা বলে , বুকে তুলে নিয়েছো হাজার উপোসী শিশুর কান্না
খোদার তরবারি শাণিত করেছো
ফুটিয়েছো নিরন্ন মায়ের মুখে হাসি।
দেশলাইয়ের কাঠি জ্বলেছে বুকে
মুখে তোমার অগ্নিবীণা।
আজ যারা দেশদ্রোহী তারাই নিয়েছে
সিংহাসন .... ভুলে গেছে সাম্যের গান
ভুলে গেছে প্রেম দিয়ে সব হয়,
এখানে এখন কেবল রক্তপাত।
ছিনিয়েছে ওরা শিশুর হাসি
বৃদ্ধ পিতার ঘর ।
যুবতী হয়েছে বেশ্যা পেটে তুলে নিতে দুমুঠো ভাত।
ওরা তোমায় শত্রু ভাবে
বলে তুমি একদিকে হিন্দু অন্যদিকে মুসলমান ...
আমি তো দেখেছি তোমাকে ছুঁয়ে
ঈশ্বর থেকেও পবিত্র তোমার প্রাণ ।
হে নুতন , হে চিরন্তন বিদ্রোহী
তুমি ই গুরুশিষ্য নজরুল ইসলাম
তোমার চরণে বিপ্লবী প্রণাম।
🌹🌹🌹
https://youtu.be/5JIdkmhRzZg?si=hrQZ2TPOJpEK9g2h
প্রখ্যাত শিল্পী নূপুর কাজীর গলায় বারবার মুগ্ধ হই । এখানে একটি গানের লিঙ্ক দিলাম 🌹
****
চেতনায় নজরুল - হৃদয়ে নজরুল ......
" গাহি তাহাদের গান // বিশ্বের সাথে জীবনের সাথে // যারা আজি আগুয়াণ ...."
নজরুল লিখতে গিয়ে বারবার এই কথাটাই মনে হচ্ছে যে এমন একটা ধুমকেতুর আজ ভীষণ ভাবে প্রয়োজন আমাদের
শিক্ষিত , উচ্চ শিক্ষিত , ধনী দরিদ্র উচ্চ মধ্যবিত্ত , মধ্যবিত্ত , নিম্নমধ্যবিত্ত প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রে আজ নজরুল ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক । এই বীভৎস সমাজ অগ্নিবাণে ধ্বংস হোক ।
আমি অতিশয় আনপড় মানুষ , কবিকে নিয়ে লিখার ক্ষমতা নেই , তবুও অন্তরে কবির ভাবনা আমাকে ভাবায় ।
ভাবতে আশ্চর্য লাগে শেষ জীবনে নির্বাক ছিলেন কবি অনেকটা বছর , হয়তো হাজার শোকের মধ্যে একটা শোক কবিকে বাকরুদ্ধ করেছিল , যাকে নিজের জীবনের ঈশ্বর ভেবেছিলেন তার পদতলে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই কবি রবীন্দ্রনাথের দেহত্যাগের কিছু কাল পড়েই অগ্নিবীণার কবির কন্ঠ রোধ হয়ে যায় ।
জীবনে সুখ পাননি , দুখুমিয়া যে তার নাম , নাছিলো ভালো ঘর , নাছিলো ভালো আহার , নাছিলো সুখের নিদ্রা , তবু প্রেম দিতে ভুলেননি , বড়ো বাউল কবির হৃদয় .....মানুষের শোকে কাতর । দীপ্ত , বজ্রকন্ঠে বারবার গেয়েছেন মানুষের গান ...." আমার ভয় নাই , দুঃখ নাই , কেননা ভগবান আমার সাথে আছেন । আমার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের দ্বারা সমাপ্ত হবে ।সত্যের প্রকাশ পীড়া নিরুদ্ধ হবেনা ।...."
শৈলজানন্দ লিখেছিলেন " রাজবাড়ী থেকে মাসে সাত টাকা পেতো নজরুল , ইস্কুলে বেতন দিতে হতোনা , নিজের খরচের জন্য সাতটি টাকা নজরুল বিছানার তলায় রেখে দিতো , তার বেশিরভাগই যেতো বিস্কুট ওয়ালার পকেটে । তারপর চলতো ধারে , সে ধার শোধ করতাম আমরা সহপাঠীরা , ...."
যখনই মন খারাপ লাগতো নজরুল চলেযেতেন গুরুদেবের কাছে .... আর তখন কবিগুরু তেজস্বী যুকক কবিকে .বলতেন গান শোনা এবার আমায় , নজরুল গাইতেন একের পর এক গান ,,,, ভক্ত আর ঈশ্বরের কী অপূর্ব দৃশ্য ।
নজরুল তখন নজরুল নয় , অগ্নিবীণার অগ্নিশিখা .....বিদ্রোহী কবি .....সাম্যবাদের এক জলন্ত স্তম্ভ । কবিকে উদ্দেশ্য করে অগ্নবীণায় কবিগুরু লিখলেন ....
"আয় চলে আয়রে ধূমকেতু
আঁধার বাধ অগ্নিসেতু দুর্দিনের এই দূর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালে হোক না লেখা জাগিয়ে দেরে চমক মেরে
আছে যারা অর্ধচেতন "
এই বীভৎস পৃথিবীতে যতদিন শোষণ অত্যাচার জাতিবিদ্বেষ ধর্মবিদ্বেষ থাকবে , ততোদিন নজরুল বজ্রকন্ঠে শোনাবেন সাম্যের গান ....স্বাধীনতার গান ....ভালোবাসার গান ॥
No comments:
Post a Comment