Friday 21 July 2023

ড: অধ্যাপক পলাশ মন্ডলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি

 
           ড:পলাশ মন্ডল  

            (১৯৭৩-২০২২ )
   অধ্যাপক উদ্ভিদ বিজ্ঞান
    উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় 
              শিলিগুড়ি               
                  -----
" তুমি কি কেবলই ছবি,
শুধু পটে লিখা।
         ওই - যে সুদূর নীহারিকা
          যারা করে আছে ভিড়
         আকাশের নীড়,
    ওই যারা দিনরাত্রি আলো হাতে
চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী
     গ্রহ তারা রবি
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও 
    হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি 
       নয়নসমুখে তুমি নাই
   নয়নের মাঝখানে
        নিয়েছ যে ঠাঁই ...." 
🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹

   


















অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।
🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏

****
তাপস কুমার চক্রবর্ত্তী ( কল্যাণী )

পলাশ আমাদের বন্ধু। আমার সঙ্গে পলাশের প্রথম দেখা ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্র্যাক্‌টিক্যাল ক্লাসে। আমরা দুজনেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অনার্স কোর্সের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। যেখানে স্কুলের মতো টাইট শিডিউলে ক্লাশ হয়। পলাশ অনেকদিন আগে সেশন শুরু থেকেই ক্লাস করছে আমি অবশ্য মাস খানেক পরে ভর্তি হয়েছি। পলাশের চেহারা দোহারা, উচ্চতায় বাঙালি মান। সাজ পোষাকে কোনো তেমন বাহার নেই। চুপচাপ। ভর্তি হয়েছে বটে তবে পছন্দের বিষয় উদ্ভিদবিদ্যা নয়। নতুন করে জয়েন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমিও সেই রকমই ভাবছি। ভাবছি ডাক্তারি পড়ব। পলাশের সঙ্গে টুকটাক কথা হয়। আমি দেরিতে ভর্তি হয়েছি বলে একটু গুটিয়ে থাকি। পলাশ ক্লাসে পেছনের সীটে বসে সব অবজার্ভ করে। মুখে আলতো হাসি লেগে থাকে ওর। কল্যাণী এ ব্লকের বাড়ি থেকে সাইকেলে আসে। সহপাঠিদের কেউ হোস্টেলে থাকে, কেউবা ট্রেনে চেপে যাতায়াত করে। আমি ইউনিভার্সিটির বাসে কল্যাণী স্টেশন থেকে আসা- যাওয়া করি। আমি বা পলাশ কেউ জয়েন্টে পাইনি। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বটানি আঁকড়ে ধরতে হয়। পলাশের অবিস্মরণীয় উক্তি, “বটানি ইজ এন আর্টস্‌ সাব্জেক্ট বাট ইন সায়েন্স ফরম”। খালি মুখস্ত কর। 

ক্লাসের শেষে বাড়ি ফেরার সময় মাঝে মাঝেই বলে চল তোকে সাইকেলে কল্যাণী স্টেশনে পৌঁছে দেব। আমার আপত্তি উড়িয়ে বলে ইউনিভার্সিটির বাসের আগেই পৌঁছে যাবি। অগত্যা ওর সাইকেলের সামনের রডে বসি। গন্তব্য কল্যাণী মেন স্টেশন কী শিবমন্দির। জোরে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে দেয় আমার বাসস্ট্যান্ডে। যতক্ষণ না আমার বাড়ি যাওয়ার লোকাল বাস ছাড়ত- দাঁড়িয়ে থাকত। ওর যেন বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। মনে হত ও যেন সঙ্গ চায়। কেমন নিঃসঙ্গ মনে হত। সাইকেলে ফেরার সময় যদি ওকে রডে বসাতে চাইতাম, কিছুতেই বসত না। ওই থাকত সাইকেল চালক। কল্যাণী থেকে নৈহাটি তে কম্পিউটার ক্লাস করতে যেত, সেটাও সাইকেল চালিয়ে। কোনদিন এসে বলত হালিশহর শ্মশানে চুপচাপ বসে সময় কাটিয়েছে। দারুন জায়গা। 

পলাশ কোন কিছুই সহজ ভাবে নিতে পারত না। সবকিছু ক্রিটিক্যালি দেখত। বি এস সি পড়া কালীন মনে করত প্রেম করা আসলে সময় নষ্ট করা। ওর হাতের লেখা ইউনিক টাইপ ছিল। কলম বা পেন্সিল ধরার কায়দাও তাই অন্যরকম। একটূ চেপে চেপে লেখা। গ্রাফোলজিস্টরা বলেন এটা দৃঢ চেতা ব্যক্তিত্ত্বের লক্ষণ। পলাশ আসলেই উদ্যমী ও দৃঢচেতা। পড়ুয়া। খুব খুঁতখুঁতে। বেশ গোছানো। ক্লাসে কোন প্রশ্ন করেনি অধ্যাপকদের। কিন্তু অপলকে শুনত। পলাশ ধীর স্থির। তবে তর্কপ্রিয়। নিজের মত প্রতিষ্ঠায় ক্লান্তিহীন। যুক্তিবাদী। ওর একটা পেটেন্ট ডায়ালগ ছিল, “ধুর! সব ভুলভাল!” পলাশ মৃদুভাষী। পলাশ একগুঁয়ে। যত দিন গেছে পলাশ গম্ভীর হয়েছে। বিএস সি-তে ফার্স্ট ক্লাস সেকেণ্ড আর এম এস সি-তে  ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, গোল্ড মেডেলিস্ট। আমি বি এস সির মার্কশীটে খুঁজি অনার্সে আম্মার ফার্স্ট ক্লাস হয়েছে কিনা, আর পলাশ খোঁজে অনার্স সাবজেক্ট তো বটেই পাসের সাবজেক্ট কেমিস্ট্রি আর জুওলজিতেও ফার্স্ট ক্লাস মার্ক্স আছে কিনা! বিএসসি তে আমরা পাঁচজন সহপাঠী নন-কলিজিয়েট হয়ে যাই, আটেন্ডেন্স কম থাকার কারনে। আমাদের পরীক্ষার আডমিট কার্ডে ও মার্কশীটে রোল নম্বরের আগে এন সি (NC) লেখা। পলাশের মন খারাপ। ধুর, সব ভুলভাল! আমি সান্ত্বনা দিই- এন সি মানে নাইস ক্যারেক্টার।

এম এস সি তে এক্সকারশনে আমরা সিমলা-কুল্লু-মানালি-চণ্ডিগড় ভ্রমণে যাই। পলাশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ি ফিরে ধরা পড়ে ক্রনিক নিউমোনিয়া। আমিও এক্সকারশনের শেষের ডিকে চুড়ান্ত অসুস্থ হয়ে পড়ি। বাড়ি ফিরে ধরা পরে আকিউট নিউমোনিয়া। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে আমি ফিরে আসি। পলাশও সুস্থ হয়ে ওঠে ।   

সেই পলাশ জীবনে কী করবে কখনো বলেনি আমায়। আমি ঠিক করে ফেলেছি আমি কি করব। আমি ম্যাজিশিয়ান হব। আমি ম্যাজিক চর্চা করি। আমরা সহপাঠীরা একসঙ্গে কলকাতা পুস্তক মেলায় যাই। আমি যাই ম্যাজিকের বই কিনতে। না কিনতে পারলে দাঁড়িয়ে পড়ে মুখস্ত করব বলে। পয়সা কোথায়। পলাশ আমার ম্যাজিক দেখে উৎসাহিত হয়ে পি সি সরকারের বই কেনে। আমি দিন কয়েক পরে সে বই ওর থেকে নিয়ে পড়ে আনন্দ পাই। ধুর, সব ভুলভাল। পলাশের ম্যাজিক উৎসাহ কমে। এম এস সির পরে আমি গেট পরীক্ষা দিয়ে রিসার্চে যাই। স্লেট নেট করি। জীবনের লক্ষ্য তখন সাইন্টিস্ট হব, অধ্যাপনা করক্ষণ, বিদেশ যাব। পলাশ গেট দেয়না। পলাশ বি এড পড়ে। তারপর নেট দিয়ে রিসার্চে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রাধানগরে স্কুলের চাকরি। পরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদে যোগদান। আমি ততদিনে উত্তরবঙ্গে কলেজে কাজ করি। পলাশ বিয়ে করে। আমি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে পলাশ মধ্যাহ্নে নেমন্তন্ন করে। ওর ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টারে গাণ্ডেপিণ্ডে খেয়ে আসি। ওর বউএর সঙ্গে পরিচয় হয়। পলাশের কল্যাণীর বাড়িতেও গিয়েছি। পলাশের শ্বশুরবাড়ি বালুরঘাটের কাছে, আমার পুরানো কর্মক্ষেত্রের কয়েক কিলোমিটার দূরে- বোল্লাতে। পলাশ একবার আমার বালুরঘাটের আস্তানায় এসেছিল, মনে পড়ছে।

প্রায় বছর বারো আগে আমি নর্থ বেঙ্গল ছেড়েছি। ও বড্ড আন-সোসাল, আমার থেকেও বেশি। ফেসবুকে প্রায় ইন আক্টিভ। হোয়াটস্‌ এপে স্ট্যাটাস দেয় না। ফোন করলে তেমন যোগাযোগ রাখে না। কেমন একটা গুটিয়ে রাখে। ধুর সব ভুলভাল। আমাদের এম এস সির একটা হোয়াটস্‌ এপ গ্রুপ আছে। পলাশ ও মেম্বর। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই। হয়তো আমাদের সম্বন্ধে ভেবেছে- ধুর, সব ভুল্ভাল! 

কাল বিকালে পলাশের অসুস্থতার খবর এক বন্ধু জানায়। ফুসফুসের অবস্থা বেশ খারাপ, ভেন্টিলেশনে আছে নেউটিয়াতে। আমি তখন ট্রেনে বাড়ি ফিরছি কৃষ্ণনগর লোকালে ঠায় দাঁড়িয়ে- কলকাতায় নতুন মেট্রো চড়ে মনে যে আনন্দ ছিল এক নিমেষে বিষাদে ভরে এল। আমাদের হোয়াট্সাপ গ্রুপে সব জানিয়ে বন্ধুদের পলাশের জন্য প্রার্থনা করতে বললাম। আমাদের শিলিগুড়ির এক ছাত্র- বিমানকে অনুরোধ করলাম  খবরটা ট্র্যাক্‌ করতে। বিমান হাসপাতাল পৌঁছে আমাকে খারাপ খবরের ইঙ্গিত দেয়। আজ দুপুরে অবস্থার আরো অবনতির কথা জানতে পারি। বন্ধুদের কারো কারো সঙ্গে কথা হয়। কাল থেকে অসহায় লাগছিল। সে অসহায়তা কাটিয়ে দিতে দুপুরে বিমান ফোন করে আমায়। কান্না ভেজা গলায় বলা বিমানের কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পাই না। আসলে আমি শুনতে চাইনা যে- পলাশ আর নেই। ধুর! সব ভুলভাল। 
পলাশ এখন থাকলে ওকে এই লেখাটা দেখিয়ে নিতাম। যা খুঁতখুঁতে ছেলে। হয়তো বলত- ধুর, সব ভুলভাল!
আর লিখতে পারছি নারে বন্ধু। কোনদিন দুঃখ দিয়ে থাকলে ক্ষমা করিস্‌। প্রনাম রইল। সঙ্গে থাকল ক’ফোঁটা অশ্রু।
 -----------------------------
জীবেন সরকার - 
সভাপতি - ঘোড়সওয়ার 
প্রোফেসর তথা ড: পলাশ মন্ডল এঁর সাথে আমার সেভাবে কোনো আলাপ বা  পরিচয় ছিলনা, যদিও বিভিন্ন সময়ে  কাজে, অ-কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার  যাতায়াত ছিল, সেই সময়ে   বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে, কখন বা ক্যাম্পাসে উনার সামনাসামনি হয়েছি, উনাকে দেখেছি। সেই মুহূর্তে প্রয়োজন হয়নি বলেই হয়তো আলাপচারিতা গড়ে ওঠেনি! তবে জীবনে পরিহাস-ই বলবো, যেদিন ভ্রাতৃপতিম অধ্যাপক নিখিলেশ রায় আমাকে খবর দিলেন যে এক্ষনি আসুন অধ্যাপক পলাশ মন্ডলকে নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছে, আই সি ইউ তে  ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে!
নার্সিং হোম কতৃপক্ষের কথা অনুযায়ী উনি যথেষ্টই সিরিয়াস! 
নার্সিং হোমের পৌঁছে দেখি এরমধ্যেই প্রচুর ছাত্র, সহকর্মী শুভানুধ্যায়ী আত্মীয় পরিজন এবং ঘোড়সওয়ার পত্রিকার নীহারদা ও উপস্থিত সেখানে , সবাই খুব উৎকণ্ঠার মধ্যেই আলোচনায় ব্যস্ত কি কি ব্যাবস্থা নিলে উনার দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা !
এর ই মধ্যে দেখি,(তখনও উনি আমার কাছে একজন অপিরিচিত মহিলা) জানতে পারলাম, উনার বিদুষী স্ত্রী , তথা অধ্যাপিকা চন্দ্রানী চৌধুরী , সমস্ত উৎকণ্ঠা মনের ভেতরে চেপে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কি করে স্বামী কে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়! কিন্তু মানুষ যা চায় সবসময় তার পরিকল্পনা বা ইচ্ছে অনুযায়ী হয়ে ওঠে না, এক্ষেত্রেও আমাদের সমস্ত আশা পরিকল্পনা হার মানলো অসময়ে উনার  পৃথিবীর সমস্ত পিছুটান ছিন্ন করে চলে যাওয়া!
অসম্পূর্ণ রয়ে গেল উনার সাথে সন্মুখ আলাপচারিতায় নিজেকে ঋদ্ধ করে নেওয়া । ঠিক তেমনি সবাই এক শূন্যতায় ঘিরে গেলাম , ঘোড়সওয়ার পত্রিকা হারালো সত্যিকারের জ্ঞানপিপাসু,  সাহিত্য অনুরাগী একজন অভিভাবক কে।  তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন  করছি। এবং তাঁর ভাবাদর্শ নিয়ে কাজে এগোবার অঙ্গীকার করছি। তিনি আছেন, থাকবেন আমরা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবো সকল কর্মে সকল কাজে।
-----------------------------------------------------








চম্পা ভট্টাচার্য
উপদেষ্টা - ঘোড়সওয়ার 

আমাদের চারপাশে যে কতো গুণীজন কতো কিছু করে যাচ্ছেন নিজেকে উৎসর্গ করে আমরা তাঁদের মধ্যে অনেককেই চিনি না। বা চিনে নেওয়ার অবকাশ পাই না। তেমনি এক ব্যাক্তিত্ব ড: প্রফেসর পলাশ মন্ডল। নিজের ছাত্রদের জন্য যাঁর মনে সারাক্ষণ শুধু একটাই চিন্তা নুতন কিছু করতে হবে, মানুষকে বিজ্ঞানমুখি করে তুলতে হবে। তার সঙ্গে সাহিত্যের প্রতি দৃঢ় অনুরাগ যাকে নিয়ে যেতো এক অদেখা পৃথিবীর সন্ধানে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তাঁর সাথে পরিচিত ছিলাম না। যতটা শুনেছি সবটাই নীহারের কাছ থেকে। ঘোড়সওয়ার এর প্রতি তাঁর যে অকুন্ঠ ভালোবাসা তা অস্বীকার করার উপায় আমাদের নেই।  তিনি নেই, এই কথাটা বলা ভুল হবে, তিনি আছেন, থাকবেন, আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে তাঁকে যাতে ধরে রাখতে পারি এটাই হোক আমাদের উপসনার স্তব ।
---------------------------------
মানুষিক

শাশ্বতী চ্যাটার্জী 

দুঃখে কাঁদে
রাগে কাঁদে
অপেক্ষা আর উপেক্ষার রথচক্রে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে কেঁদে যায় 
অন্তঃসারশূন্য অভিমানে

স্বকারান্ত অভিধানে
নিজের নাম লিখতে লিখতে
অজস্র শাপশাপান্তের শেষে
কোমল ধৈবতে ফেরে
বোবা সুর

দূর থেকে ভেসে আসে 
অভিমানী পায়ের আওয়াজ
মিলিয়ে যে গিয়েছিল
কাতর পিছল পথ ধরে
ফিরে আসে 

কে কবে শোনেনি ডাক
কে কবে ফিরিয়েছিল
ভিক্ষাপাত্র ক্ষাত্রতেজ প্রতিশোধ ক্ষমা
নগণ্য করেছিল কে কখন 
নির্বিশেষ সম্ভাষে যাপনে
মুখোমুখি দাঁড়ায় দিগন্তে
বেলাশেষে চিনে নেয় 
একে অপরের অশ্রু
মহাকাশ থেকে পারিজাত গন্ধ আসে
নক্ষত্রের হার 
পরায় পরস্পরে
বাক্যহীন প্রশ্রয়ে প্রত্যয়ে
------------------------------------

    ---------------------------------
  "তোমার দয়া যদি
              চাহিতে নাও জানি
    তবুও দয়া করে
              চরণে নিয়ো টানি।
    আমি যা গড়ে তুলে
              আরামে থাকি ভুলে
    সুখের উপাসনা
    করি গো ফলে ফুলে--
              সে ধুলা-খেলাঘরে
    রেখো না ঘৃণাভরে,
              জাগায়ো দয়া করে
    বহ্নি-শেল হানি।

    সত্য মুদে আছে
              দ্বিধার মাঝখানে,
    তাহারে তুমি ছাড়া
              ফুটাতে কে বা জানে।
     মৃত্যু ভেদ করি'
              অমৃত পড়ে ঝরি',
     অতল দীনতার
               শূন্য উঠে ভরি'
     পতন-ব্যথা মাঝে
                চেতনা আসি বাজে,
     বিরোধ কোলাহলে
                গভীর তব বাণী।"
---------------------------------------------
ভাবনা আমার
স্মিতা গুপ্ত বিশ্বাস 

দাদার কথা যতো শুনি ততোই দাদার প্রতি শ্রদ্ধায় নত হই, নীহারের কাছ থেকে তখনই তাঁর কথা শুনি যেন মনে হয় খুব পরিচিত এক আপনজন আমাদের। তাঁর গুণের কথা বলা কোথায় যেন কম করে বলা। তাঁকে দেখিনি কখনো কিন্তু অনুভব করি তার প্রেম স্নেহের পরশে আমরা ধন্য, আমরা হারাতে পারিনা আমাদের অমন প্রিয় মানুষকে, তাঁর যতো আশা ছিলো ঘোড়সওয়ার আমরা সেগুলো পরিপুরণ না করে থামতে পারিনা, এই প্রত্যয় আমাদের সকলের, আমার আমরণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাঁর প্রতি
---------------------------------------------

বটবৃক্ষের প্রতি
আপনি একটি বটগাছ ছিলেন। যার সুপ্রাচীন ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে বিভাগের ওঠাপড়া। যার সুশীতল ছাঁয়ায় বসে প্রাণ জুড়িয়েছে আমার মতো কয়েক শত পথিকের। যার ঝুড়ির কুহকজালের রহস্যে ঘুরপাক খেতো বিজ্ঞানের কত শত জটিল ধাঁধা। যে প্রকান্ড ঘন অন্ধকার গুঁড়ির ভিতর লুকিয়ে রাখতো কৃষ্ণগহ্বরের ভূতুড়ে রহস্য। যার পাতার ফাঁক গলে মহাজাগতিক রশ্মিরা মাটি ছুঁতো। যে শিখিয়েছিল মূল কান্ড ভেঙে গেলেও কীভাবে স্তম্ভমূলের সাহায্যে আরও হাজার বছর বাঁচা যায়। যার সুদুরপ্রসারী শাখা-প্রশাখায় জড়াজড়ি করে অবস্থান করতো বিজ্ঞান ও সাহিত্য। সর্বোপরি যে কান্ডজ্ঞান যুক্ত মেরুদন্ড সোজা রেখে, নিজের অবস্থানে অনড় থেকে দিশা দেখিয়েছে হাজার খানেক অপরিণত লতা-গুল্ম (ছাত্র-ছাত্রী) কে।
আপনি জানতেন, আমি পরজন্মে বিশ্বাস করি না। তবে আবার যদি জন্মাতেই হয় তবে এবার 'পলাশ' এর মতো একটা ঋতুর আয়ু নয়, বরং বটের মতো 'অন্তহীন' হয়ে আসবেন।

-সলমন (এই উচ্চারণেই আপনি ডাকতেন আমাকে)
আপনার প্রাণের প্রিয় ছাত্র - সলমন







-------------------------------------
শ্রদ্ধাঞ্জলি 

শামীম (লন্ডন)

তুমি চলে গেলে তাই 
মাটির মন্দিরা কাঁদে কাজলি পরাণ,
সানাইয়ের সুরে সুরে নির্বাক অশ্রু ঝরে , বৃন্ত থেকে
খসে পড়ে পুরা গুলিস্তান ...
-------------------------------------
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো।

সকল মাধুরী লুকায়ে যায়, গীতসুধারসে এসো॥

কর্ম যখন প্রবল-আকার গরজি উঠিয়া ঢাকে চারি ধার

হৃদয়প্রান্তে, হে জীবন নাথ, শান্ত চরণে এসো॥  
----------------------------------------

মিলন কী বিরহেই পরিপূর্ণ এই প্রশ্নটাই আমাকে বারবার এক প্রশ্ন চিহ্নের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়, কিছু মিলন জীবনের এক অভূতপূর্ব আনন্দ নিয়ে আসে, মন তখন আনন্দ সাগরে ভেসে ভেসে নিজেকে সাজায় , অথচ আমরা কেউ বলতে পারি না গভীর মিলনের ভেতরে ঈশ্বর বিরহের সুর সুরঞ্জিত করে দেন তার নিজস্ব লীলায়। মহাকালের এই আবর্তে ভাঁটা পড়ে সেই মিলনের। যাকে আমরা মুহূর্তে আপনজন করে নিই সেই মানুষটি মায়ার বন্ধন ছিঁড়ে মহাকালের রথে চেপে চলে যায় অন্য এক অদৃশ্য জগতে। দৃশ্যমান তখন কেবল স্মৃতি, সেই স্মৃতিতেই কান্না হাসি, রাগ অভিমান, অনুরাগ অহংকার। ঠিক তেমনি আমার অহংকার আপনাকে নিয়ে, তেমনি অনুরাগ আপনাকে নিয়ে, মাত্র অল্প কিছুটা সময়ে আপনার কাছ থেকে যা কিছু পেয়েছি তাতে ঋণী আমি। আপনার উদার মানসিকতা যেমন আমাকে ভাবায়, তেমনি আপনার জ্ঞান যুক্তি, এই ব্রহ্মান্ডকে জানার স্পৃহা সঙ্গে সাহিত্যের প্রতি সু চিন্তিত মতধারা আমাকে আবিষ্ট করে। খুব অল্প দিন ই আমাদের কথা হতো , সেই কথাগুলো শুধু কথার কথা নয় , প্রতিটি কথার মধ্যে এক দৃঢ় প্রত্যয়ের সুর । এটাই হয়তো ছন্দ , জীবনবোধের , যা আমাকে অস্থির করে তুলতো আপনার কাছে যাওয়ার জন্য। 
আজ আমার একলা ঘরে আমি একা, অথচ মনের মণিকোঠায় আপনি শিমুল বন এঁকে দিয়েছেন আর তাতেই আমার অহংকার। আপনাকে যে কথা দিয়ে ছিলাম তা আমি পূরণ করতে মরিয়া , আপনজনদের সব কথা না রাখলে যে ঈশ্বরের কাছে অপরাধী হতে হয় , আপনি আমাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই আমার বিশ্বাস। ভালো থাকুন  পলাশদা, আমাদের সঙ্গে থাকুন, আপনার সব কথা যেন রাখতে পারি 🙏🙏❤️🙏🙏

" হে ক্ষণিকের অতিথি
এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া ঝরা শেফালির পথ বাহিয়া।।
কোন্ অমরার বিরহিণীরে চাহ নি ফিরে,
কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া।
ওগো অকরুণ, কী মায়া জানো,
মিলনছলে বিরহ আনো।"

আপনার পরমাত্মীয় - নীহার দাস
----------------------------------------------------------
Sea

Miroslava Panayotova 
( Bulgaria )

Sea , 
your moan is eating away at me.
It banishes peace,
exposes the lie,
kills death.
One thing I'm afraid of, sea -
and much life is equal to death.
-----------------------------------------------------


----------------------------------------------------------

----------------------------------------------------------
উৎসর্গ --
সুব্রত রায়চৌধুরী

তোমাকে দেখেছি আড়চোখে।
সে চোখে ভালোলাগার আবেশ ছিল-
কিন্তু, তোমার মুখে তখন আলোর ঝরণা।
ভেবেছিলাম সে আলো বোধহয় শুধু আমারই জন্য।

ভুল ভেবেছিলাম। 

এখন তুমি যেন এক নামহীন, 
কায়াহীন আলোকবর্তিকা।

ঠিক যেন চুপ করে পড়ে থাকা ,
এক একাকার আলোর সুড়ঙ্গ।

তবু চেয়ে থাকি অবিরাম ।
একদিন ঠিক পেরিয়ে যাব সে আলোর পথখানি।
-----------------------------------------------------------
জীবন কথা 
জয়তী কুন্ডু 

আজীবন পথ চলা 
নিভৃতে কথা বলা 
বন্ধুর পথে বাধা 
সুরহীন গলা সাধা 

সেই পথে একা 
দেখা বা অদেখা 
উচ্চাঙ্গের তারে 
চমকিত ঝংকারে 

ঠাঁটবাট লুটায় ভূতলে 
প্রবেশ গভীর অতলে 
আগুন মাটির শেষে 
চিরশান্তির দেশে ।
---------------------------------------------------------


                                                           *****


No comments:

Post a Comment

Micro poems collection on happy new year 2024

          🙏🏻🌹🙏🏻🌹🙏🏻🌹🙏🏻🌹🙏🏻🌹🙏🏻 The secret languaje of soul Marlene Pasini (Mexico )                I am transit of fire deep  ...