কাঁটার ওপারে সুগন্ধের জীবন
শুত্রদীপ রায়
বাসনাগৃহের সামনে গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়িয়েছি । হাতে শুধু অবিশ্বাসের ফুল। সমস্ত শরীর জুড়ে নাস্তিকতার উল্কি। ইশ্বরের চিহ্ন স্বীকার করিনি কখনও। 'How many roads must a man walk down,to call him a man?' সে পথ যে ইশ্বরের নয় তা আমি আপ্রান বিশ্বাস করতে চেয়েছি।
অথচ কেউ কেউ বলেন একদিন সন্ধ্যায় আমাকে তরুন সন্ন্যাসীর কুটিরের বাইরে দেখা গেছে। কে সেই আমি,এই লেখারত আমি তো নই!সে কি তবে আমার প্রতিপিন্ড! এই খুঁজতে খুঁজতেই আমার অসম্ভব ইশ্বরদ্বেষ কিভাবে যেন ধূপ চন্দনের সুবাসে ভরে গেল!এই অনিত্য জগতের সমস্ত মোহমায়ার সূতো আলগা হতে থাকল, আলগা হতে থাকল সংকটের রজত রজ্জু।
আমার সীমানার ওপারেই তো আদিম জঙ্গল,সেখানেই ফুটে আছে ভেষজ ও জড়িবুটি। তার এক পাশে বয়ে যায় পূন্যতোয়া। সন্ধ্যের ঘোরলাগা মুহূর্তে চরাচর ভেসে যায় ' সোহং সোহং ' মন্ত্রে। আমি আকন্ঠ গরল পান করে জলে নেমে যাই,যদিও আমার হাত ধরে থাকেন তরুন সন্ন্যাসী। তার কুটিরের আলো দেখতে পাই,তাই আর অন্ধকারে ভয় নেই। আপাতত বৈখরী জপে আমি নিজের মোহমুক্তির পথ খুঁজছি। ছেড়ে এসেছি সমস্ত শহুরে কোলাহল। বোধ করি এ দেহে আর কোনো মিথ্যে রঙ থাকল না।
আকাশে মেঘ জমে আছে,ঘন কালো সন্নিবদ্ধ। তরুন সন্ন্যাসী তার দিকে নির্নিমেষ ভ্রুকুঞ্চনহীন তাকিয়ে আছেন।যেন শুষে নিচ্ছেন সমস্ত পাপ,কাটিয়ে দিচ্ছেন সমস্ত দোষ।আমি যেন সেই আকাশ, সব ছেড়েও ভেতরে কলুষ নিয়ে বসে আছি।এক একটা বজ্ররেখাপাত আমার কৃতকাম-- ছিড়ে ফেলেছি অথচ ছাড়তে পারিনি আমর্মমূল। অথচ আমি আশা নিয়ে বসে আছি-- "আমার সকল কাঁটা ধন্য করে,ফুটবে ফুল ফুটবে..."
বিশ্ব কবিতা দিবসে ঘোড়সওয়ার সাহিত্য পত্রিকা ও ওয়েব ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা
অপেক্ষাতে
পুতুল গুপ্ত
প্রথম যেদিন
বললে কথা তুমি,
দেহে আমার জাগলো প্লাবন,
শিরায় শিহরণ।
ফিসফিসিয়ে
বললে কানে কানে,
' কেমন আছো তুমি
তোমার দেহে এবং মনে?'
' আসছি আমি,
আমায় মনে রেখো।'
সেদিন আর হলনা
নিশিযাপন,
অনিদ্রাতেই কাটলো সময়,
তোমার কথা ভেবে।
কে তুমি!
আসবে তুমি কবে?
সকাল হলে
ভাঙলো যখন ঘুম
কোকিল কুজনে,
পলাশ,শিমুল,তমাল
করছে মাতামাতি
সারা শরীর জুড়ে।
অধরে আমার সুখের পরশ
তোমার চুম্বনে।
এ' যেনো এক রং বাহারী খেলা,
আমায় নিয়ে মনে।
বললে আবার,
অপেক্ষাতে থেকো।
প্রশ্ন করি আমি
কে তুমি?
বললে এবার হেসে
আমি তোমার
' বসন্ত ' গো
আমায় ধরে রেখো।
স্বপ্ন আলেখ্য
স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
মালা গাঁথছিলো সুধা। গুনগুন করে গানও গাইছিল। একটা সাদা কাগজ হালকা গন্ধ মেখে ওর ফুলের ঝুড়িতে এসে পড়লো। এদিক ওদিক চাইলো সুধা। একটি মানুষ এগিয়ে আসছে ওর দিকে হাতে এক খোলা খাম। পরণে বিদেশী কায়দার বেশভুষা, শুধু টাই এর বাঁধন আলগা হয়ে একদিকে হেলে গেছে। সুধার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল সেই মানুষ।
- এমন সুন্দর মালা যে গাঁথতে পারে তার নামটাও নিশ্চয়ই ...
কথা শেষ হবার আগেই উত্তর আসে, সুধা।
কে গো তুমি আমার বন্ধুর সাথে? তুমিও কি বিদেশী? অনেক দূরের পথ হেঁটে পাহাড় ডিঙিয়ে মেঘের দেশে যাও?
- কি করে জানলে যে আমি মেঘের দেশে যাবো?
- আমি সব জানি। আমায় রাজার দূত বলেছে। তোমার হাতের ওই কাগজে কি লেখা আছে ?
- এটায়? এটা রানীর চিঠি।
- তাই? জানো আমাকেও রাজা চিঠি দেবে বলেছে |তোমার রাণীর নাম কি গো?
আমার রানীর নাম বন্যা। কিন্ত তুমি এমন উদাস হয়ে জানলায় বসে আছো কেন?
- আমি অমল। আমায় কবিরাজ মশাই বেরোতে বারণ করেছে, আমার খুব কঠিন অসুখ করেছে।
- অসুখ আবার কঠিন হয় নাকি? আরে আমার তো কতই অসুখ করে। আমি তো সহজ করে নি ওদের।
- তুমি কে গো? কি নাম তোমার?
- আমার নাম? আমায় রানী মিতা বলে ডাকে।
সুধা শুধোয়, তুমি কি রানীকে খুব ভালবাসো?
মানুষটি হাতে ধরা চিঠির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে রানী তো বন্যার মত ভালবাসায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়, রানীর ভালবাসা এক চুপকথা হয়ে লেগে থাকে, রানীর ভালবাসা এক আকাশ ছেঁড়া মেঘের দলকে সেলাই করে নক্সা তোলে, রানীর ভালবাসা ভোরের সূর্যের আলোয় পাখিদের চোখ খোলা, সূর্য ডোবা আলোয় নদীর বুক চিকচিক করে ওঠা।
- এইবার বুঝেছি তুমি কি করে পাহাড় ডিঙ্গাও, কিভাবে মেঘের দেশে ঘোড়া ছোটাও, সব ওই রানীর জন্য,
অমল বলে ওঠে,
আহা কি সুন্দর করে কত কি বললে গো! আমায় শিখিয়ে দেবে? আমি রাজা এলে বলবো, হ্যাঁ বলবো যে রানীর মিতা শিখিয়ে গেছে আমায়। তুমি ওই মেঘের দেশ থেকে আমায় একটু ওষুধ এনে দেবে, আমি ঠিক ভাল হয়ে যাবো।
মানুষটা সুধার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, তোমার এই মালা তুমি কি কর?
- আমি তো বিক্রি করি।
- তুমি দিয়ে দাও তোমার ভালবাসাকে?
সুধা রাঙা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। হাত থেমে যায়। মানুষটা বলে ওঠে আমিও দিয়ে দিয়েছি আমার বন্যাকে।
তোমার বন্যা? তবে যে বললে রানী? অমল জানলার গোড়ায় এসে দাঁড়ায়।
সুধা ফুলগুলো নিয়ে এসে অমলের সামনে এসে দাঁড়ায়। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ঘোড়ার পায়ের শব্দ। অমলের জানলার সামনে এসে থামে আওয়াজ। রাজপেয়াদা। অমলকে বলে যায়, আজ রাত গভীর হলে রাজা আসবে, রাজ বৈদ্যও..
সুধা সব ফুল নিয়ে অমলের দিকে চেয়ে থাকে | রানীর মিতা চিঠির দিকে চাইলো।
এক পশলা রোদ্দুর পত্রে জ্বলজ্বল করছে। ... দূর থেকে দেখবো বলেই কাছে গেছিলাম...এক্কা দোক্কা সময় ঠাওর হয়নি।
পত্রের ভিতর জলছবির মত ভেসে ওঠে সেই পাহাড়ের বড় পাথরে যেখানে অমিত প্রথম হাত ধরেছিল লাবন্যর সেই জায়গাটা। অমিত পিছন ফেরে, অমল বলে ওঠে মিতা দেখো ওই যে তোমার রানীর রথ আসছে, তোমায় নিয়ে যাবে বলে। অমিত তাকিয়ে দেখে মেঘের দল ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভেসে যাচ্ছে, আর কেউ নিপুণ হাতে সেলাই করে দিচ্ছে। সুধার তৈরী মালার মত। লাবণ্য সুধা একাকার হয়ে যায়.. অমিত অমলের মাথায় হাত রাখল, ভালবাসার হাত।
ghorsowarmagazine7@gmail.com
No comments:
Post a Comment